এস এম রাকিব,মাধবপুর : সোনালী আঁশ পাট। একই সাথে পাট অর্থকরী ফসলও। সেজন্য কৃষকরা পাট চাষ করতেন। তবে বর্তমানে পাট চাষের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও বাজারে চাহিদা না থাকায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। ব্যতিক্রম নয় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলাও। কয়েকবছর আগেও উপজেলার বিভিন্ন-প্রান্তের কৃষকরা পাট চাষ করতেন। তবে এখনো উপজেলার কৃষকরা পাট চাষ করেন। তবে এখন আর পাট তোলার জন্য নয়; বরং শাঁক হিসেবে খাওয়ার জন্য। গত কয়েকবছরে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পাট শাঁকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরাও শাঁক চাষে ঝুকেছে।আর শাঁক উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে পাট উৎপাদন। এতে কৃষকের পাশাপাশি সরকারও প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ উপজেলা কৃষি বিভাগ পুরো নির্বিকার।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, এবার উপজেলায় শাহজাহানপুর, আদাঐর, বুল্লা, ছাতিয়াইন ও বাঘাসুরা ইউনিয়ন মিলিয়ে ৩৩০ হেক্টর জায়গায় জুড়ে দেশি, তোষা, কেনাক, মেস্তাসহ বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছে। বিশেষ করে নিচু এলাকায় পাটের আবাদ বেশি হয় বলেও জানায় কৃষি বিভাগ।এদিকে বুধবার (৩ জুন) মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। তবে বেশির ভাগ কৃষকই আঁশের বদলে পাট শাঁককে প্রাধান্য দিচ্ছে। উপজেলার ছতিয়াইন গ্রামের নায়িম হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনে চাষ, সার, বীজ কিনতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার টাকা। জমিতে বাছাই খরচ হয় ২ হাজার টাকা এবং পাট কাটা ও জাগ (পানিতে ভিজিয়ে রাখা) দিতে ব্যয় হবে ৩ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে একজন কৃষকের মোট ব্যয় হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। অথচ এক বিঘা জমিতে ভালো আবাদ হলে পাট পাওয়া যায় ৮ থেকে ৯ মণ। গতবার উঠতি বাজারে মণ প্রতি ১১০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাট চাষ করে লাভের বদলে পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় থাকে।
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদিকে সমপরিমাণ জায়গায় শাঁক আবাদ করলে লাভ হয় খরচের দ্বিগুণ। আর এতে করে এখন অনেকেই পাট শাঁক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’
একই কথা বলছেন উপজেলার মাহবুবুল আলম নামের আরেক কৃষক। তিনি বলেন, ‘বাজারে পাটের চাহিদা না থাকায় আমাদের পাট চাষে আগ্রহ নেই। তবে শাঁক হিসেবে বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। আর এক বিঘা জমি থেকে পাট শাঁক চাষ করে ৪০ দিনের মধ্যে ফসল উৎপাদন করে তা বিক্রি করা যায়। এতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। এংরাজ মিয়া নামে আরেক কৃষক জানান, ‘এবার ১ বিঘা জমিতে শাঁক উৎপাদন করে এ পর্যন্ত ১১ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আরও জমিতে যে ফসল আছে তা বাজারে বিক্রি করলে ৭-৮ হাজার টাকার মতো পাওয়া যাবে।’
এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার উপজেলার ৩৩০ হেক্টর এলাকাজুড়ে দেশি, তোষা, কেনাক, মেস্তাসহ বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছে। হওয়ায় নদী, নালা, খাল, বিল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পাট পচানো ও নিড়ানোর অনিশ্চয়তায় পাট চাষের একটা বড় সমস্যা বলে মনে করেন অনেক কৃষক। তারপরেও উপজেলার শাহজাহানপুর, আদাঐর, বুল্লা, ছাতিয়াইন ও বাঘাসুরা ইউনিয়নের কিছু অংশে পাট চাষ হয়েছে বলে তিনি জানান।