দৈনিক হবিগঞ্জের বাণী’র স্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর চিকিৎসক ডাঃ অনুজ কান্তি দাশ। আজকের বিষয়- কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ ও এর চিকিৎসা। পর্ব-১।
চিকিৎসা সংক্রান্ত লেখাগুলো অনেক কাঠ-খোট্টা ধরণের হয়- সাহিত্যের কোন বালাই থাকেনা। আমি একটু অন্য রকমভাবে একটি গল্প দিয়ে শুরু করছি, আমার লেখাটা। গল্পটি গোপাল ভাঁড়ের। নিশ্চয়ই সবাই শুনেছেন। আরেকবার শুনুন, সংক্ষিপ্ত আকারে।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র সন্তান হয়েছে- সভাসদরা সবাই সেই সংবাদ শুনে বেজায় খুশি। গোপাল দেখা গেল নিশ্চুপ। রাজা বললেন- কি গোপাল, তুমি কিছু বলছ না যে? আমার ছেলে হয়েছে শুনে তোমার কেমন লাগছে? গোপাল বলল- “সকালে মলত্যাগের পর যেমনটি লাগে, ঠিক তেমনই লাগছে মহারাজ।“। রাজা তো রেগে আগুন- হবারই কথা, পুত্র লাভের খুশির সাথে কি না মলত্যাগের সম্পর্ক!!! গর্দান নিয়ে নেয়ার উপক্রম প্রায়। গোপাল বলল, মহারাজ এক সপ্তাহের ভেতর যদি আমি এই জবাবের উত্তর না দেই, তাহলে, যে শাস্তি দিবেন, তাই মাথা পেতে নিব।
২-৩ দিন পরেই খুব ভোর বেলা গোপাল মহারাজকে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ডাকতে লাগল। রাজা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুললে গোপাল বলল, মহারাজ শিগগির আমার সাথে চলুন। মহারাজ বললেন, গোপাল আমি প্রাতকার্য সেরে আসছি। গোপাল মহারাজকে সে সুযোগ দিল না। দুজনে মিলে দৌঁড়ে বের হয়ে নৌকায় উঠলেন। নৌকাতেই কিছুক্ষণ পর প্রাতঃরাশ সম্পন্ন করলেন রাজা। কিছুক্ষণ পরেই রাজার মলত্যাগের চাপ শুরু হল। রাজা গোপালকে নৌকা ভেড়াতে বললেন। গোপাল বলল, মহারাজ এখানে বড্ড সাপের উৎপাত, নৌকা ভেড়ানো যাবেনা। কিছুদূর যাবার পর রাজার যখন একেবারে এসেই গেল এমন ভাব তখন আবার বললেন, গোপাল এবার ভেড়াও, গোপাল বলল, মহারাজ এ বনে বাঘের উৎপাত। আমি কিভাবে এই মামূলি কাজের জন্যে আপনার জীবন বিপন্ন করি!!! মহারাজ কোনমতে আটকালেন এ যাত্রায়। একটু পরেই আরেকবার মোচড়, এবারের মোচড়ের তোর খুবই প্রবল, আটকে রাখার সকল সম্ভাবনাই ব্যর্থ হবার জো। রাজা এবার তাই গোপালের দিকে না তাকিয়ে মাঝিকেই বললেন, ব্যটা মাঝি তাড়াতাড়ি নৌকা ভেড়া। নৌকা ঘাটে লাগতেই রাজা কোন দিকে না তাকিয়ে দিলেন এক দৌঁড়। কর্ম সেড়ে যখন উনি ফিরলেন, উনার তখন তৃপ্ত চেহারা। গোপাল বলল, কি মহারাজ, আপনার অনুভূতি কেমন- এটা কি পুত্রের জন্মের সংবাদের চেয়ে কম না বেশি আনন্দের??? মহারাজ বললেন তা আর বলতে- কি পুরস্কার নিবে বল দেখি গোপাল।
যাই হোক, গল্প বলা শেষ- মূল আলোচনায় আসি। আমাদের আলোচনার বিষয় যদিও এর বিপরীত- কোষ্ঠকাঠিন্য। কিছু কিছু রোগ থাকে, যে রোগে ঔষধ থেকেও জীবনযাত্রার পরিবর্তনটাই মূখ্য ভূমিকা পালন করে। কোষ্ঠকাঠিন্য তার মধ্যে একটি। তাই এ রোগ নিয়ে সচেতনতা তৈরিতেই আমার এই প্রয়াস। প্রথমে জেনে নেই, কোষ্ঠকাঠিন্য কি জিনিস? সহজ কথায় বললে মলদ্বার দিয়ে শক্ত পায়খানা অনিয়মিতভাবে যাওয়া। রোগীরা অনেক সময় মলত্যাগ করার সময় জোরে চাপ দেওয়া বা মলত্যাগের পর পুরোপুরিভাবে সন্তুষ্ট না হওয়া বা মলদ্বারে বা পেটে ব্যথা হওয়া বা অস্বস্তি বোধ হওয়াকে বুঝিয়ে থাকেন। আবার অনেকে বলেন যে, প্রতি ৩ দিনে যদি একবারও পায়খানা না হয়, তবে সেটাই কোষ্ঠকাঠিন্য। সপ্তাহে যদি ৩ দিনের কম পায়খানা করে কেউ তবে তাকেও অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। তবে এরোগের একটা মজার ব্যাপার হল, রোগীরা কেন জানি এটা নিয়ে আলাপ করতে লজ্জা পান- যদিও লজ্জা পাবার কি আছে আমি এ কথা বলে এটা নিয়ে একটু মজা নিলেই উনারাই আবার গড়গড় করে সব বলতে থাকেন। তবে অনেক রোগী এমন খারাপ অবস্থা নিয়ে আসেন তখন আসলে মেজাজ ঠাণ্ডা রেখে কথা বলা কঠিনই হয়ে পড়ে। তাই এরোগ নিয়ে লজ্জার কোন অবকাশ নেই।
কোষ্ঠকাঠিন্য কি শুধু বড়দের হয়? ব্যাপারটা তা নয় কিন্তু- এটা জন্ম থেকেই হতে পারে। অনেক শিশু ভুমিষ্ট হবার পর থেকে পায়খানাই করে না, ফলশ্রুতিতে পেট অনেক ফুলে যায় অথবা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে একটু বড় বাচ্চা আসে পেট ফুলা নিয়ে- বাবা মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে যে বাচ্চাতো ছোট বেলা থেকেই কম পায়খানা করে। এরকম হলে আমরা প্রথমেই ধারণা করি যে বাচ্চাটি হয়ত Hirschsprung’s disease এ ভুগছে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কি বংশগত রোগ? কোন জিন দ্বারা এ রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়? -সেটা নিয়ে গবেষণার ফলাফল এখনো চলমান হলেও পরিবারের এক সদস্যের হলে অন্যদের হবার অনেক উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসকেই দায়ী করেছে বেশিরভাগ গবেষণা। আজকে এ পর্যন্তই- আগামী পর্বে জানব কোষ্ঠ কাঠিন্যের লক্ষণ, কি কি কারণে এ সমস্যা হয়- হয়ত বা নতুন কোন গল্প, কবিতার মাধ্যমে।
লেখকঃ ডাঃ অনুজ কান্তি দাশ এফসিপিএস (সার্জারি) শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার- সূর্যমুখী হাসপাতাল, হবিগঞ্জ। রোগী দেখেনঃ প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা। মোবাইলঃ ০১৬৮৩৯২৬০০১