“ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখকথা- নিতান্তই সহজ সরল সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি, তারি দু’চারিটি অশ্রুজল নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ, অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে – শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।“ বলতে আসলাম কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ নিয়ে, বলা শুরু করলাম কি না ছোটগল্প নিয়ে কবিগুরুর কবিতা??? যাই হোক সমঝদার কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হে- নিচের লক্ষনসমূহ না পড়েও আমি জানি আপনাদের অনেকের ঠোঁটের কোণে হাসি চলে আসছে।
এবারে আসি মূল আলোচনায়- কোষ্ঠকাঠিন্য মানে কিন্তু আমরা প্রথম পর্বেই বলে দিয়েছি। এর সাথে কিন্তু অন্য অনেক সমস্যা জড়িত থাকতে পারে যেমন মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়া, মলদ্বারে ব্যথা হওয়া, পায়খানা করতে বেশি সময় লাগা, অধিক চাপের প্রয়োজন হওয়া, মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা আবার মাঝে মাঝে শক্ত পায়খানা হওয়া, শরীরের ওজন কমে যাওয়া, পায়খানাতে অত্যধিক গন্ধ বা ফ্যান ফ্যান পায়খানা হওয়া এরকম অনেক সমস্যা। অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরেও পূর্ণতার অনুভূতি আসেনা অনেকেরই।
কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়? প্রথমেই বলেছিলাম যে এ রোগটি মানুষ যেরকম জীবন যাপন করে তার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে- তাই আগে সে কারণগুলো জেনে নেই। প্রথমেই আসি খাবারের কথায় – আঁশ জাতীয় খাবার যদি কেউ কম খায় অথবা পানি যদি কম খায়। আঁশ জাতীয় খাবার বলতে আমরা বুঝি নিজের দেহের প্রতি আমরা যতটুকু যত্নবান, নিজের মনের প্রতি আমরা ততটাই উদাসী। অথচ মন সুস্থ থাকলে আমাদের মলত্যাগও অনেক স্বাভাবিক থাকে, উলটোভাবে বললে সকাল সকাল মলত্যাগ হয়ে গেলে জীবন জি বাংলা আর না হলে… নিজেকেই জিজ্ঞেস করুন উত্তর পেয়ে যাবেন। যাই হোক সেরকমই একটি অবস্থা হচ্ছে Irritable bowel syndrome. যদি কারও প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩ দিন পেটে ব্যথা, বদহজম, মলত্যাগে অনিয়ম বা মলের সাথে মিউকাস যাওয়া এরকম সমস্যা হয়ে এরকম পর পর ৩ মাস তাহলে IBS ধারণা করা যেতে পারে।
এই রোগের চিকিৎসা করাটা একটু কঠিনই। কারণ, এখানে খাবারের পরিবর্তনের সাথে মানসিক চিকিৎসা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কিছু কিছু ঔষধ যেমন আয়রন ট্যাবলেট, ক্যালসিয়াম, যেসব এন্টাসিডে আল্যুমিনিয়াম থাকে এরকম ঔষধে পায়খানা শক্ত হতে পারে। কারও যদি ডায়াবেটিস থাকে, স্ট্রোকের রোগয়, থাইরয়েড হরমোন কম থাকে বা রক্তে ক্যালসিয়াম বেশি থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। নার্ভের সমস্যা জনিত রোগেও এরকম হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়েরা এই কোষ্ঠকাঠিন্যে খুব কষ্ট পান। এছাড়াও মলদ্বারের ক্যান্সার, ফিসার, পাইলস রোগের সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের যোগসাজস আছে। আবার একটা বিশাল বড় অংশের কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে কিন্তু কোন কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না।
তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া বাঞ্চনীয় সাথে সাথে উনাকে রোগটি নিরূপণ করার জন্যে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দেয়া উচিত- চিকিৎসায় আসলে চটকদার কোন বিজ্ঞাপন না হওয়াই ভাল- কয়েক মাস বা বছর ধরে যে সমস্যার সূত্রপাত হয়, সেটা নিরাময়ে কিছুটা সময়তো দিতেই হবে।