মাধবপুর ( হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা : বৈশ্বিক মহামারী করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশের সব অফিস, আদালত, কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু চা বাগান চলছে স্বাভাবিক গতিতে।
এক ভিডিও কনফারেন্সে সিলেটের জেলা প্রশাসক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন চা শ্রমিকরা সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কাজ করছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পুর্ন বিপরীত। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চা বাগানের শ্রমিকদের কাজ করার কোন সুজুগ নেই। তাই চা শ্রমিকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা আসার পর থেকেই এর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে চা শ্রমিক সংগঠনগুলো।
কিন্তু তাদের কথায় কেউ কর্নপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত চা বাগানে হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস। চুনারুঘাট চন্ডীছড়া চা বাগানের করোনা আক্রান্ত অসুস্থ শিশু আভাস তন্তবায় (৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেটে করোনা আক্রান্ত রুগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে মারা গেছে।
শনিবার রাতে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আক্রান্ত হয়েছে তার চাচাতো ভাইও। লকডাউন করা হয়েছে চন্ডীছড়া চা বাগানের ১২ টি বাড়ি। ইতিমধ্যে কতটা ছড়িয়ে পড়ছে কেউ জানেনা। কারণ চা শ্রমিকদের করোনা বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতা নেই।
এব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা আদিবাসী সমিতির সভাপতি সাইমন মুর্মু বলেন, এতদিন বলা হয়েছে চা বাগানের সবুজ বেষ্টনীর ভেতরে করোনা আসবে না কিন্তু এখন তা ভুল প্রমানিত হয়েছে। তাই মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে অনুরোধ করছি দয়া করে চা শ্রমিকদের জীবন বাচাতে মজুরীসহ ছুটি প্রদান করুন। নাহলে যে কোন খারাপ পরিস্থিতির দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।
হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার ২৪ টি চা বাগান নিয়ে গঠিত লস্করপুর ভ্যালির সভাপতি রাবিন্দ্র গৌড় বলেন, লস্করপুর ভ্যালির ১৯ হাজার চা শ্রমিক ও তাদের পরিবার আতংকের মধ্যে আছে। সরকারকে ভুল বুঝিয়ে চা শ্রমিকদের করোনা ঝুঁকিতে কাজ করানো হচ্ছে। চা বাগানে পাতা উত্তোলনের সময় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব। কিন্তু যখন পাতা উত্তোলনের জন্য শ্রমিকদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পরিবহন দিয়ে নেওয়া হয় তখন কিভাবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখবে? ফেক্টরিতে কাজ করার সময় কিভাবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখবে? শুধুমাত্র পাত উত্তোলনের সময় ছাড়া আর কোন জায়গায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না।
তাই সরকার ও মালিকপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি বাংলাদেশের সবচেয়ে অনগ্রসর এই চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর জীবন বাচাতে মজুরীসহ ছুটির ঘোষণা দিন। এবং পুষ্টিহীনতায় ভোগা চা শ্রমিক পরিবার গুলোকে সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতার আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।