হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ পারুলকে ১৫ অক্টোবর এর মধ্যে তার পিতার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল করার জন্য উকিল নোটিশ করা হয়েছে।
উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সোয়াবই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ নুরের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম হবিগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী বদরু মিয়া বদরুলের মাধ্যমে ২৩ সেপ্টেম্বর এই উকিল নোটিশ প্রেরণ করেন। উকিল নোটিশে ফারুক আহমেদ পারুলের পিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন মর্মে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে উকিল বদরু মিয়া বদরুলের সেরেস্তায় লিখিত বক্তব্য দাখিলের জন্য আদেশ করা হয়েছে।উকিল নোটিশ দাতা সাইফুল ইসলাম জানান ধর্মঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক আহমেদ পারুল সোয়াবই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ০১/০৫/২০১৬ খ্রি.তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দাখিলকৃত কাগজপত্রে এবং ১১/০৬/২০১৭ খ্রি. তারিখে স্থাণীয় সাংসদ(বর্তমান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী) মাহবুব আলীর নিকট হরষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষানুরাগী/বিদ্যুৎসাহী সদস্য পদের জন্য লিখিত আবেদনে পারুল নিজেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরের সন্তান বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও হবিগঞ্জ জেলা আদালতে স্বত্ব মামলা ০৩/২০১৮তে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান বলে বিবৃতি দিয়েছেন। যা সঠিক নয়।সাইফুল ইসলাম আরো দাবি করেন ফারুক আহমেদ পারুলের পিতা মুক্তিযোদ্ধা নন। মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে লাল মুক্তিবার্তা,গেজেট,ভারতীয় তালিকা এবং মুক্তিবার্তা সনদ আবশ্যক।এর কোনটিই তার পিতার নেই। এমনকি স্থানীয় ভোটার তালিকায় ও তার পিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ নেই। সাইফুল আরো বলেন পারুল প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রাষ্ট্র ও সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য তার পিতাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বলছে। বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনগন ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিঃসন্দেহে অবমাননাকর।এডভোকেট বদরু মিয়া বদরুল নোটিশ পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।এ বিষয়ে ধর্মঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ পারুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাইট টাইমস প্রত্রিকাকে জানান, তার পিতা মরহুম আবুল খায়ের যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এর স্বপক্ষে যাবতীয় প্রমানাদি তার কাছে রয়েছে।মুক্তিবার্তায় মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকায় তার পিতার নাম রয়েছে।তিনি এখনো উকিল নোটিশটি পাননি। নোটিশ পাওয়ার পর তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।তিনি আরো বলেন প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে বহুদিন ধরেই এমন অপপ্রচার চালিয়ে আসছে।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে প্রকাশিত রাজাকার আলবদর শান্তি কমিটির একটি তালিকা রাইট টাইমস প্রত্রিকার এ প্রতিনিধির হাতে এসেছে।এ তালিকায় ধর্মঘর ইউনিয়নের রাজাকারদের তালিকায় ফারুক আহমেদ পারুলের পিতা আবুল খায়েরের নাম ২১ নম্বরে রয়েছে। ধর্মঘর ইউনিয়নের আমবাড়িয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ও হবিগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ এবং হবিগঞ্জ জেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুজ জাহের রাইট টাইমস পত্রিকার সাথে আলাপকালে জানান, সারা ইউনিয়নের মানুষ জানে ফারুকের বাবা আবুল খায়ের স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও পাক বাহিনীর দোসর ছিলেন। একজন তালিকাভুক্ত চিহ্নিত রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা মহান মুক্তিযুদ্ধকে উপহাস করার শামিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুকোমল রায় জানান,আবুল খায়ের পাক হানাদার বাহিনীর দোসর ছিলেন।বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা লেঃ (অব) কাজী কবির উদ্দিন আমার হবিগঞ্জকে বলেন, আবুল খায়েরের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্ত হয়েছে এমন তথ্য তার জানা নেই।ধর্মঘর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ তৈয়ব আলী জানান আবুল খায়ের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এই মর্মে চেয়ারম্যান পদে থাকাকালে মোঃ আঃ নুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিলেন বলে শুনেছেন।তবে এ জাতীয় প্রত্যয়নপত্রের বলে কেউ মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ধর্মঘর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আঃ নুর জানান, তিনি এমন কোনো সার্টিফিকেট কাউকে দেননি।চেয়ারম্যানের দেয়া নাগরিকত্ব সার্টিফিকেটের ভিতরের লেখা ইঙ্ক রিমুভার দিয়ে মুছে সেখানে লিখেছে তার পিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। আমি এ জালিয়াতির বিষয়ে আদালতে এফিডেফিট করেছি।