স্টাফ রিপোর্টার: হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার বক্তারপুর রাস্তায় জাইকার অর্থায়নে ২ হাজার ২০০ মিটার রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে করা হচ্ছে কৃষি শিল্প হাওর অঞ্চল খ্যাত সাতকাপন ইউনিয়নের বক্তারপুর রাস্তার কাজ। প্রতিবাদ করলেই উল্টো ভয়ভীতি ও চাঁদাবাজীর মিথ্যা মামলা দেয়ারও অভিযোগও উঠেছে ঠিকাদার জিল্লুর রহমান ও ইয়াসিন আহমেদের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ভাটি অঞ্চলের প্রায় ৫টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষের জন চলাচলের একমাত্র রাস্তা। কিন্তু প্রতি বছরই বর্ষার মৌসুমে রাস্তাটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে ব্যাঘাত ঘটে ঐ অঞ্চলের মানুষের। এ দূর্ভোগ থেকে লাগব হতেই ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’ (জাইকা) এর অর্থায়নে ৪ কোটি ১০ লাখ ৮১ হাজার ৮৬০ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ২০০ মিটার রাস্তা ও ২৪ ইঞ্চি গাইড ওয়াল নির্মাণ করার কথা। যা ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আজও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। অভিযোগ উঠেছে কাজের শুরুতেই অনিয়ম আর দুর্নীতি করে ঠিকাদার জিল্লুর রহমান ও ইয়াসিন আহমেদ।
নিম্ন মানের বালু, পাথর, সিমেন্ট ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ উঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। ঢালাইয়ে সিলিকা বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি। শ্রমিকরা নৌকা দিয়ে এ মাটি সংগ্রহ করছে পার্শ্ববর্তি হাওর থেকে। সি.সি ঢালাইয়ের মিক্সিংয়েও চলছে তুঘোলকি কান্ড। ৬.৩.১ (কংকিট, বালু ও সিমেন্ট) অনুপাতে ঢালাইয়ের মিশ্রন করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। মিশ্রনকৃত ঢালাইয়ের কোন কোন স্থানে অণুবিক্ষন যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ‘কংকিট’। ফলে কাজ শেষ হতে না হতেই ফেটে যাচ্ছে ঢালাই। এ অবস্থায় চৌকস শ্রমিকেরা ‘ফাঁটল ধরা সি.সি ঢালাই’ ঢেকে দিচ্ছেন ‘আর.সি.সি ঢালাই’ দিয়ে।
‘সি.সি-আর.সি.সি’ ঢালাইয়ের উচ্চতা নিয়েও করা হচ্ছে ‘নয়-ছয়’। বিশেষ কৌশলে দেয়া হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। ১১ ইঞ্চি উচ্চতার ঢালাই করার কথা থাকলেও দু-একটি স্থান ছাড়া এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সিডিউল অনুপাতে ‘সি.সি’ ও ‘আর সি.সি’ ঢালাই হবার কথা ছিল যথাক্রমে ৪+৭ ইঞ্চি। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। শুধু তাই নয়, নির্মাণ শেষ হয়েছে এমন কিছু স্থান ঘুরে ‘আর.সি.সি’ ঢালাইয়ে রডের চিহ্নও দেখা যায়নি।
ঠিকাদারের এমন অনিয়মের প্রতিবাদ করলে দেয়া হচ্ছে হুমকি ধমকি। চাঁদাবাজীর মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখানো হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
সাতকাপন ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল করিম জানান, ‘আমরা প্রথমে এ অনিয়মের প্রতিবাদ করেছি। ঠিকাদার আমাদের কথায় কোন পাত্তাই দেননি। বরং উল্টো মিথ্যা চাঁদাবাজীর মামলা দয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগও দায়ের করা হয়।
এদিকে ঠিকাদার জিল্লুর রহমানের সহযোগি ইয়াসিন আহমেদ জানান, কাজে কোন অনিয়ম হয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা বারবার নিম্ন মানের কাজের অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূঞা। অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রকল্পের কাজ খুব ভালভাবেই চলছে।
তবে পরিদর্শন করে অনিয়ম আর নিম্ন মানের কাজ হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমি প্রকল্পটি দুইবার পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, জবাবদিহিতা না থাকায় দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদাররা। বর্তমানে রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলে হবিগঞ্জ জেলা সদরের সাথে ওই এলাকার মানুষ যোগাযোগে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসতে পারে বলে মনে করেন ভোক্তভুগীরা।