স্টাফ রিপোর্টার : ভোগান্তির অপর নাম হয়ে দাড়িয়েছে হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি নিজ হাতে পাসপোর্টের আবেদন করতে চাইলে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।কিন্তু দালালদের মাধ্যমে গেলে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। সাধারণ গ্রাহকরা দালাল ছাড়া গিয়ে বিভিন্ন বিড়ম্বনার শিকার হয়ে যদিও শেষ পর্যন্ত আবেদন করতেও পারে, কিন্তু এই পাসপোর্ট সময়মতো পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। মাসের পর মাস ঘুরেও পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছে না। তবে দালাল ধরলে কোন ঝামেলা নেই। শুধু টাকা দিলেই চলবে, বাকি সব কাজ দালালের। তাদের কাছে পুলিশ ভেরিফিকেশন, জন্মনিবন্ধন সনদ আর সত্যায়িত করার সিল সবই আছে । হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে এসে অনেকেই এমন অভিযোগ করছেন। দালালদের একটি চক্র অফিসের আশপাশে ফটোকপি সহ বিভিন্ন দোকানে রীতিমতো ঘাঁটি বানিয়ে বসে আছে।এদের সাথে গোপন আঁতাত আছে পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর। তাই দালাল ছাড়া হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গেলে নিত্য-নতুন স্টাইলে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। যারা নিজে আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে যান, তাদের পূরণকৃত ফরম সঠিক হলেও বিভিন্ন অজুহাতে ভুল ধরে ফিরিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু দালালের মাধ্যমে গেলে কোন অজুহাত থাকে না,সবকিছু ঠিক হয়ে যায় অদৃশ্য ইশারায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ট্রাভেলস এজেন্সির কর্মচারী জানান, প্রতিটি সাধারণ পাসপোর্টে তারা ১হাজর ৮ শত থেকে ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত নেন।এই টাকা থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ৮ শত টাকা ও পাসপোর্ট অফিসের লোককে ৬ শত টাকা দিয়ে বাকিটা তারা রাখেন। তবে জরুরী পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৫/৭ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেওয়া হয়। আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি বলেন, আমি হজ্জ করার জন্য পাসপোর্ট করতে গিয়ে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করিয়েছি। সময়মতো আমি পাসপোর্ট পেয়েছি কোন সমস্যা হয়নি। শুধু কিছু টাকা বেশি লেগেছে। আফজাল হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, সরাসরি গিয়ে বিভিন্ন ঝামেলা দেখে দালাল ধরে পাসপোর্ট করিয়েছি। শুধু লাইনে দাঁড়িয়ে কাগজ পত্র জমা দিয়েছি। সময়মতো দালালের নিকট থেকে পাসপোর্ট নিয়ে এসেছি। সে তার সাধারণ পাসপোর্ট করতে সাড়ে ৫ হাজার টাকা লেগেছে বলে জানান। সে আরও জানায় দালালদের সত্যায়িত করার সিল ও সিগনেচার পাসপোর্ট অফিসের লোকজন দেখলেই চিনতে পারে। ফলে কাজগুলো হয় দ্রুত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংবাদকর্মী জানান, তিনি পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বাড়ি থেকে ফরম পূরণ করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নিকট থেকে সত্যায়িত করে নিয়ে যান। হবিগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে গেলে প্রথমে পুরনো পাসপোর্ট দেখতে চায়। সেটা দেখানোর পরে বলেন আপনি সর্বপ্রথম যেই পাসপোর্ট করেছিলেন ঐটা লাগবে। এটা ডিজিটাল পাসপোর্ট, এরমধ্যে আমার সব তথ্য আছে বলার পরেও কোন কাজ হয়নি। পাসপোর্ট অফিস থেকে বলা হয় দুটি ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে। কারণ পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। যেহেতু দুটি ফর্ম একই ব্যাক্তির দ্বারা সত্যায়িত করতে হয়, বাধ্য হয়ে পাসপোর্ট অফিসের সমনের এইচ এম এন্টারপ্রাইজ নামে ফটোকপির একটি দোকানে গিয়ে দালালের মাধ্যমে ১ হাজার ৫ শত টাকা দিয়ে ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে গেলে একই ব্যাক্তি বলে আগে এদের মাধ্যমে আসলে এতো ঝামেলা হতো না। কোন এখন আর কোন পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না। সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কম্পাউন্ডারের পাশেই হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি।তবুও খোদ প্রশাসনের চোখের সামনেই এ-সব গ্রাহকদের ভোগান্তি ও দালালদের উৎপাত চলছে প্রকাশ্যই । সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের অভিযোগ, পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্ব পালনরত আনসার সদস্য, ভেরিফিকেশন কর্মকর্তা ও ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে দালালরা কাজ করছেন। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক মধুসূদন সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন অফিস বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট দিতে দেরি হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে জানালে তিনি বলেন, কারো কোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমার কাছে এসে অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।