সবজি বিক্রি করে লাভের চিন্তা বাদ দিয়ে এখন পুঁজি ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন মাধবপুরের সবজি চাষিরা। করোনা ভাইরাসের কারণে পাইকার না আসায় এবং স্থানীয় বাজারে চাহিদা কম থাকায় পানির দামেও বিক্রি হচ্ছে না উৎপাদিত সবজি।
আর সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় সবজি মজুদ ও করতে পারছেন না চাষীরা। এমন অবস্থায় জমি থেকে সবজি তুলে কম দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা।
আর এতে করে পুঁজি ফেরত পাবেন কি না এমন আশঙ্কায় দিন খাটছে সবজি চাষীদের। অথচ অন্যান্য বছর সবজি চাষ করেই উপজেলার বেশিরভাগ চাষীরা সংসার চালাতেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
তবে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কম সুদে ঋণের আওতায় আনা হবে।
কৃষকরা জানান, এ বছর সবজির ভালা ফলন হয়েছে। তবে অন্যান্য বছর বাইরে থেকে পাইকার এলেও এবার আসছেন না। সেজন্য চাষীরা স্থানীয় বাজার গুলোতে ১০ টাকা কেজি ধরে টমেটো, ১৫ টাকা কেজি ধরে সিনাত বেগুন এবং ৪০ টাকা কেজি করে কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন। আর এতো কম দামে সবজি বিক্রির ফলে শ্রমিক খরচ ও অন্যান্য খরচ তোলাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের কৃষক রাসেল মিয়া বলেন, আমি এবার ২৪০ শতক জমি ১ লাখ টাকায় লিজ নিয়ে টমেটো, সিনাত বেগুন ও কাঁচা মরিচের চাষ করেছি। জমিতে প্রথমদিকে মোটামুটি ভাল ফলন হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই খরার কারণে অনেক টমেটো নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু জমিতেও যা সবজি আছে তাও করোনার কারণে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, এলাকার পাইকাররা বাজারে না আসায় বিক্রি করতে পারছিনা। সেজন্য পানির দামে গ্রামের বাজারে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরেক সবজি চাষি সোহেল মিয়া বলেন, বর্তমান বাজারে টমেটোর দাম কম। তাই যে টাকা দিয়ে জমিতে টমেটো, সিনাত বেগুন ও কাঁচামরিচ উৎপাদন করা হয়েছে তা বিক্রি হবে না। বাজারে টমেটোর দাম না থাকায় কৃষকরা শ্রমিকদের ঠিক মতো বেতন দিতে পারছে না। প্রত্যেক শ্রমিককে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৫শ টাকা দিতে হয়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে। আমরা সরকারে সহযোগিতা আসা করি।
কৃষক রাসেল মিয়া জানান, ২৪০ শতক জায়গায় টমেটো, সিনাত বেগুন ও কাঁচা মরিচ চাষ করতে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার মত খরচ হয়। ৫০ হাজার টাকার মত এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অনেক জমিতে ভাইরাসের আক্রমণ করেছে। টমেটো প্রথমদিকে ভাল ফলন হলেও খরার কারণে অনেক টমেটো নষ্ট হয়ে গেছে। খরার কারণে অনেক লস হয়েছে। বেশি ক্ষতি হচ্ছে করোনায়। দূরের পাইকাররা আসছে না বাজারে। গাড়ি আসতে জায়গায় জায়গায় বাধার সৃষ্টি হয়।
তবে মাধবপুর উপজেলা উপকৃষি কর্মকর্তা তাপস চন্দ্র দেব জানান, বাংলাদেশ সরকার কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। কৃষকদের ৪% সুদে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। যদি এটি চলমান হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের আওতায় আনতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।