মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদাঐর ইউনিয়নের সম্ভদপুর গ্রামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মিটিং করে আবিদ মিয়ার পরিবারের ৩১ সদস্যকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। মিটিং এ তাদের একঘরে করার ঘোষণা দিয়ে গ্রামের কাউকে ওই পরিবারের সঙ্গে না মেশার সীদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। কেউ ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মিশলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। গত শনিবার ( ৫ সেপ্টেম্বর) এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাজচ্যুত করে দেওয়ার বিষয়ে সমাজচ্যুত ব্যক্তি ঐ গ্রামের এনু মিয়ার পুত্র আবিদ মিয়া বাদী হয়ে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, সম্ভদপুর গ্রামের মাতব্বর আব্দুল আলী উরুফে কাইল্লা, এমবাদ উল্লাহ, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুল্লা মাষ্টার, মঙ্গল আলী,শফিক মিয়ার নেতৃত্বে সম্ভদপুর গ্রামের হাবিবুল্লাহ মাষ্টার এর বাড়িতে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে মিটিং থেকে সমাজচ্যুত করার সীদ্ধান্ত হয়। গত ০৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী আবিদ মিয়ার মেয়ের বিবাহ ছিল, বিবাহের আগের দিন আবিদ মিয়ার নিকট আব্দুল আলী উরুফে কাইল্লা ও তার সহযোগীরা দশ হাজার টাকা চাদাঁ দাবী করে । আবিদ মিয়া টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করলে বিয়ের দিন মসজিদের ইমামসহ বরযাত্রীদেরকে বিয়ে বাড়িতে আসতে বাঁধা প্রদান করা হয়। মসজিদের মাইক দিয়ে ঘোষনা করে হয়, আবিদ মিয়ার পরিবারের লোকজন সমাজের বাহিরে, তাদের বাড়িতে কেউ যেন বিয়ে এবং অন্যান্য কাজে না যায়। তাদের বাঁধার কারনে বিয়ের দিন আবিদ মিয়া ও বরযাত্রীদের মান-সম্মানসহ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। বর্তমানে আবিদ মিয়ার পরিবারের লোকজনকে হাঁটে – ঘাটে, মাঠে কোথায় চলাফেরা করতে দিতেছে না এবং প্রকাশ্যে হুমকী প্রদান করতেছে। এছাড়া আবিদ মিয়া অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন এমন এক ঘরে করে রাখার অবস্থা চলতে থাকলে আবিদ মিয়া ও তার পরিবারের লোকজনদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নাই।
ঐ পরিবারের সদস্য আবিদ মিয়ার ভাই ফিরোজ মিয়া বলেন, আমরা জমিতে যেতে পারছিনা চাষ করতে পারছি না। আমাদের কে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে, গ্রাম্য মাতব্বর আব্দুল আলী অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, এটা আমার একার সীদ্ধান্ত না।এরা গ্রামের কোন আইনকানুন মানে না এবং গত দুই বছর যাবত মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন বা হাদিয়া দেয় না। তাই গ্রাম বাসী হাবিবুল্লাহ স্যারের বাড়িতে মিটিং করে সীদ্ধান্ত হয়েছে তারা মসজিদের ইমামের বেতন দিলে আমরা আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করবো তাদের নিয়ে।
অভিযুক্ত গ্রাম্য মাতব্বর ও আদা ঐর ইউনিয়নের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা শফিক মিয়া চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে গ্রাম্য মাতব্বর স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুল্লাহ মাষ্টারের সাথে ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। আদাঐর ইউ/পি চেয়ারম্যান ফারুক পাঠান বলেন, এমন অভিযোগ আমি এখনও পায়নি। তবে কাউকে সমাজচ্যুত করা এটা খুবই খারাপ কাজ। আমি এ বিষয়ে খবর নিচ্ছি।
মাধবপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকবাল হোসেন বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি এখনই খবর নিয়ে দেখছি। তবে এমন কেউ করে থাকলে এটা আইন পরিপন্থি। কারণ দেশে সমাজচ্যুত করার আইন নাই।
এই বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হলে মাধবপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার তাসনূভা নাসতারান বলেন, এক ঘরে করে দেওয়ার বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।