লিটন পাঠান, মাধবপুর প্রতিনিধি: জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার কর্মরত সেকেন্ড অফিসার মোসলেহ উদ্দিন। এছাড়া তার স্ত্রী-সন্তানদেরও করোনা উপসর্গ রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাধবপুর থানার ওসি তদন্ত গোলাম দস্তগীর আহাম্মেদ জানান, সারাক্ষণ সাধারণ মানুষের সেবা করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে মোসলেহ উদ্দিন করোনা আক্রান্ত হন।
এস আই মোসলেহ উদ্দিন, তার স্ত্রী-সন্তান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন ওসি তদন্ত গোলাম দস্তগীর।
মাধবপুর থানার সেকেন্ড অফিসার আক্রান্ত মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ”গত ৫ জুন বিকাল থেকে জ্বর অনুভূত হওয়ায় স্ত্রীকে বলেছিলাম, তোমরা আমার কাছ থেকে দূরে থেকো, আমি সম্ভবত করোনা পজেটিভ। সে বলে যা হবার তা হবে, দূরে থাকা কি সম্ভব? তোমার সেবা-যত্ন করবে কে? রাতে প্রচণ্ড জ্বর ও সারা শরীর ব্যথায় আমি অস্থির। ৬ ও ৭ জুনও জ্বর। ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করি। জ্বর আসলেই শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা করতো”
তিনি আরও বলেন, “আমার অবুঝ নিষ্পাপ ছেলে-মেয়ে দুটি বার বার আমার কাছে এসে বলে, আব্বু তোমাকে পানি ঢেলে দেই, মাথা টিপে দেই, তুমি ভালো হয়ে যাবে। ইচ্ছে করলেই তাদেরকে দূরে রাখতে পারি না। ৮ জুন মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেই। তারপর থেকে অপেক্ষার পালা। ১২ জুন পর্যন্ত শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। এরই মধ্যে আমি একটু সুস্থ হলেও ১৩ জুন রাতে আমার ৩ বছরের ছেলের জ্বর আসে। ভয়ে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার মতো। অবস্থা আল্লাহর রহমতে ১৪জুন সকালে জ্বর কমে যায়। পরের দিন আমার স্ত্রীর জ্বর ১০০ ডিগ্রির উপরে। চোখ-মুখ অন্ধকার। কি করি ভেবে পাচ্ছি না। আমার বউ আমাকে সাহস যোগায়। জ্বর নিয়েই ঘরের সব কাজ কর্ম করে। সবাই মিলে গরম পানি খাওয়া থেকে শুরু করে ভাপ নেই, চা খাই, ভিটামিন সি জাতীয় ফল খাই। সাথে ডাক্তারের দেয়া ঔষধ। মনে মনে ভাবি মরলে সবাই এক সাথেই মরবো। প্রতিদিন অপেক্ষার প্রহর গুনি, কিন্তু নমুনার রেজাল্ট আসে না।”
মোসলেহ উদ্দিন বলেন, “গত ১৭ জুন রাতে আমার সাড়ে ৪ বছরের মেয়ের জ্বর আসে। মনটা আরো দূর্বল হয়ে যায়। সকালে জ্বর না থাকায় মনের মধ্যে একটু ভরসা পাই। কিন্তু আমার স্ত্রীর জ্বর কমে না। ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক খায়। ২০ জুন মোটামুটি আমরা সবাই সুস্থবোধ করি। অবশেষে ২১ জুন রাতে আমার নমুনা পরীক্ষার রেজাল্ট আসে করোনা পজেটিভ। সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে এখন সপরিবারে আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ আছি। আমাদের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।”