লিবিয়ায় আলোচিত ২৬ বাংলাদেশী খুনের ঘটনায় নিহত হবিগঞ্জের যুবক তানিম মাহমুদ তোফাজ্জলের ভাইয়ের দায়ের করা মানব পাচার মামলায় এক আসামী গ্রেফতার হয়েছে। পরে গ্রেফতারকৃত আসামী মোশারফ হোসেন (৪২) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মানবপাচার সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামী মোশারফ হোসেন (৪২)ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পুরাইল গ্রামের মৃত আব্দুল হাতেম মাতব্বর এর পুত্র।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) দুপুরে হবিগঞ্জ সিআইডি পুলিশ কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রেসব্রিফিংয়ে সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শাহ মামুন জানান, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের হাজী মোতালেব হোসেনের পূত্র তানিম মাহমুদ তোফাজ্জল (২২) গত বছরের ২৬ মে ভ্রমন ভিসায় দুবাই যায়। সেখানে যাবার কিছুদিন পর তোফাজ্জলকে ইতালি পাঠানোর নামে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী দলের সদস্যরা তাকে প্রলোভন দেয়। এক পর্যায়ে দাদা নামের এক দালালের কাছে বানিয়াচং উপজেলার কুমরী গ্রামের আব্দুল হালিমের পূত্র শামীম ভিকটিম তোফাজ্জল ছাড়াও দুবাই প্রবাসী মোঃ সজীব ও মোঃ ডালিমকে তুলে দেয়। পরে লিবিয়া সীমান্তে উল্লেখিত তিনজনকে ইতালী যাওয়ার খরচ হিসাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দাবী করে মানবপাচারকারীরা।
মানবপাচারকারীরা বানিয়াচংয়ের তানিম মাহমুদ তোফাজ্জলকে দিয়ে মোবাইল ফোনে বাড়িতে তার স্বজনদের কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবী করে। পরে তিনজনের পরিবার শামীমের কাছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিলে সে ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা মানবপাচারকারীদের ঢাকা কর্পোরেট অফিসের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ করে। পরে ২৮ মে ২৬ বাঙ্গালীর সাথে তানিম মাহমুদ তোফাজ্জল খুন হয়।
এ ব্যাপারে তানিম মাহমুদ তোফাজ্জলের বড় ভাই কাওসার আলী বাদী হয়ে গত ৭ জুন বানিয়াচং থানায় রংপুরের আব্দুল্লাহ (৪২), সিলেটের জনৈক দাদা (৪৫) ও হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কুমড়ী গ্রামের মোঃ শামীম (৩৫) এর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০/২৫ জনকে আসামী করে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির ইনপেক্টর মুন্সী আব্দুল কুদ্দুস প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হবিগঞ্জের সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার শাহ মামুনের নেতৃত্বে গত ২৫ জুন মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম সহযোগী মোশারফ হোসেনকে ফরিদপুরের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার (০৮ জুলাই) বিকেলে মোশারফ হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান উদ্দিন প্রধানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং দাদা ছদ্মনামধারী আসামীর প্রকৃত নামসহ অন্যান্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনপেক্টর মুন্সী আব্দুল কুদ্দুস জানান, এ ঘটনার সাথে আরো অনেকেই জড়িত রয়েছে এবং গ্রেফতারকৃত মোশারফ হোসেন মুক্তিপনের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তিনি অচিরেই অন্যন্যা আসামীদের গ্রেফতারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্যে ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের কিছু লোক আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত থেকে ভূমধ্য সাগর দিয়ে লোকজনকে ইতালী প্রেরণ করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশী চক্রের সাথে নাইজেরীয় চক্রের বিরোধ হলে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নাইজেরীয় নাগরিকরা গত ২৮ মে ২৬ বাংঙ্গালীকে হত্যা করে।