সৈয়দ সালিক আহমেদ ॥ ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং জেলা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ২৪ঘন্টা ৭দিন ডেলিভারী সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন সেবা কর্মীরা। সরকার থেকে প্রাপ্ত পিপিই ব্যবহার করে তারা এসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এই পিপিই-র পর্যাপ্ত পরিমাণ এবং মান নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে, তারপরও তারা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন সরকারের নিদের্শনা মেনে। চারদিকে যখন লগডাউন, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন তখন গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা স্থল হচ্ছে হাতের কাছে এসকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র গুলো।
কিন্তু সচেতন মহল মনে করে, সরকারীভাবে স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের জন্য একবার (ওয়ানটাইম) ব্যবহারযোগ্য ২/৩ সেট পিপিই দিয়ে কেমন করে দিনের পর দিন তারা সেবা প্রদান করতে পারবে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, যাদের ক্ষেত্রে করোনার চিহৃ/ ইতিহাস থাকবে তাদের ক্ষেত্রে শুধু পিপিই ব্যবহার করে সেবা প্রদান করবে। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বেশ কিছু করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছেন, যাদের পূর্বে কিংবা বর্তমানে কোন ধরণের করোনার চিহৃ ছিলনা। একইভাবে সারা দেশের ন্যায় এরই মধ্যে হবিগঞ্জের ডাক্তার, নার্স এবং প্রশাসনের বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের কোন করোনার চিহৃ বা লক্ষণ নাই, যাহা জনমনে উদ্রেগ সৃষ্টি করেছে।
একদিকে সরকারী নির্দেশনা এবং অন্যদিকে মানবিকতা এই দুটার মধ্যে যথেষ্ট ঝুকি নিয়ে তাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে। এসকল স্বাস্থ্য কর্মীদের যদি যথেষ্ট পরিমাণ সেফটি সিকোউরিটি না দেওয়া যায় তাহলে একে একে বন্ধ হয়ে যাবে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর এই সেবার স্থান। ইতিমধ্যে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জেলা সদর হাসপাতালে সাময়ীকভাবে করোনা ছাড়া অন্যান্য সেবা বন্ধ হয়ে আছে।।
এ অবস্থা চলতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ঝুকিতে পড়ে যাবে গর্ভবতী মা এবং নবজাতক শিশু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একজন গর্ভবতী মা তার গর্ভকালীন সময়ে কমপক্ষে ৪বার চেকআপ করা দরকার, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মায়েরা নূন্যতম এই সেবাটুকু গ্রহণ করতে পারছেনা। সরকার যেখানে মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানো জন্য বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, সেখানে এসকল সেবা কেন্দ্র বন্ধ হলে মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যুর হার অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
সরকারী এবং বেসরকারী সহযোগিতায় হবিগঞ্জ জেলার ৪০ টির মতো উনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে, যেখানে ২৪ঘন্টা ৭দিন অন্যান্য সেবার পাশাপাশি স্বাভাবিক প্রসব সেবা চালু আছে। সরেজমিনে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় যে, প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে প্রতিমাসে ৩০/৪০টি স্বাভাকি প্রসব হচ্ছে। আর এসব সেবাদানকারীদের জন্য সরকারীভাবে বরাদ্ধকৃত ৩/৪ সেট পিপিই ছাড়া আর কিছুই নাই, তবে এগুলো একবার ব্যবহার যোগ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সেবাদানকারী বলেন যে, লক্ষণ বা ইতিহাস ছাড়া করোনা রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমান পিপিই এবং ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা করা দরকার।
এবিষয়ে পইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা নুরজাহান বেগম বলেন, আমার এই কেন্দ্রে অন্যান্য সেবার পাশাপাশি প্রতি মাসে ৬০/৭০টি স্বাভাবিক ডেলিভারী হয়। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস হতে আমাকে চশমা গ্লাভসসহ ৪সেট পিপিই দেওয়া হয়েছে, আমি এই পিপিই ব্যবহার করেই সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে যেভাবে লক্ষণ ছাড়া করোনা ছড়াচ্ছে তাতে খুবই ভয়ের মধ্যে আছি।